Sunday, October 28, 2012

শীতে আপনার ত্বকের পরিচর্যা

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়; ফলে বায়ুমন্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়এই শুষে নেয়ার কারণে ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকেআমাদের দেহের ৫৬ শতাংশই হলো পানিআর এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়েত্বকের যেসব গ্রন্হি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে
তা আর আগের মতো ঘর্ম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে নাএতে ত্বক আরো শুকিয়ে যেতে থাকেএখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের ত্বকে থাকে ধর্মগ্রন্হি, থাকে তেলগ্রন্হি যেখান থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হতে থাকেএই ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর একটি তেল আর পানির মিশ্রণ বা আবরণী তৈরি করে যা দেহকে শীতল করে রাখে এবং ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে ও ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করেশীত এলে ত্বক ছাড়াও সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ঠোঁট নিয়েকম-বেশি সবারই ঠোঁট ফাটে সেক্ষেত্রে তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এক্ষেত্রে ভেসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ঠোঁট ভালো রাখা যায়তবে মনে রাখতে হবে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো কখনো উচিত নয়এতে ঠোঁট ফাটা আরো বেড়ে যেতে পারেআর এক শ্রেণীর লোকের এই শীত এলেই পা ফাটার প্রবণতা দেখা যায়সেক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবেতারপর পা শুকিয়ে যাওয়ামাত্র ভেসলিন মেখে দিনএছাড়াও গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখলে পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায় তবে এখন বাজারে অনেক রকমের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়এটা আসলে তেল আর পানির একটি মিশ্রণএতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ যেমন ঃ পেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল অয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুইড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন, প্লাইকন ইত্যাদিএখন শীতকালে বাড়ে এমন একটি রোগের বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক রোগটির নাম হচ্ছে ইকথায়োসিসইকথায়োসিস আবার বিভিন্ন ধরনের আছেতবে আমরা তার সবগুলোতে না গিয়ে শুধু ইকথায়োসিস ভ্যালগারিস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করবএটি একটি জন্মগত রোগ এবং রোগটি শিশুকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি হাজারে অন্তত এ রোগে একজন ভুগে থাকেনারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সমপরিমাণএ রোগে যারা আক্রান্ত হয় তাদের হাত ও পায়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়িগুঁড়া মরা চামড়া বা আঁইশ পায়ের সামনের অংশের বা হাতের চামড়ায় লক্ষণীয়ভাবে ফুটে উঠতে দেখা যায়তবে হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্হান থাকবে সম্পুর্ণ স্বাভাবিকএদের ক্ষেত্রে শীতকাল এলেই প্রতি বছর এর ব্যাপকতা বেড়ে যায়এদের হাতে বা পায়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট এবং মোটা যা কিনা সাধারণ লোকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়এরই সঙ্গে তাদের থাকে এলার্জিক সমস্যাএ ধরনের রোগীর মধ্যে কারো কারোর আবার নাক দিয়ে প্রায়ই পানিপড়া অর্থা সর্দি সর্দি ভাব থাকবেতাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে আরো পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে, তাদের পরিবারে এলার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনো আছেএ রোগটি কখনোই ভালো হয় নাতবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবশীত এলেই বেশি বেশি করে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় নাতবে যাদের ফাটা অবস্হা খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়আর এটি পেতে যদি অসুবিধা হয় তাহলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়
*********************************
লেখকঃ   ডা. দিদারুল আহসান
সুত্র  :  দৈনিক আমার দেশ, ২৭ নভেম্বর ২০০৭